Tuesday, August 11, 2009

বয়ান

সম্প্রতি, একদল মানুষ- সহযাত্রীরা যাদের এক-এক করে আধামৃত ফেলে ছিল ভূমধ্যসাগরে; তারা বাঙালি ছিল। তাদের ভাষা বাঙলা। সমুদ্রে ফেলে দেবার আগে, সেই অন্তিমমুহূর্তে তাদের কারো আর্তনাদ, কারো অসহায় বাক্য আমরা শুনতে পাইনি। কিংবা সাহারা মরুভূমির বালিবিন্দুর মধ্যে যে বাঙালিরা হারিয়ে গেল, মোদ্দাকথা যে বাক্য ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে সমুদ্রে ডুবে মরল, যে বাক্য বাংলা, নিহত হলো অজ্ঞাত দেশে, আমি সেই বাঙলা ভাষাতে লেখালেখি করি। আমার বাক্যও ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়েছে, আজ আমিও চাই তারা কবিতায় ডুবে মরুক।

এদিকে র‌্যাব যতই আমাদের ভাইগুলোকে ক্রসফায়ারে মরুক, উন্মাদনা যতই আমাদের মমতার বোনকে ছিঁড়ুক, কিংবা রাতের পুলিশ নক্ষত্রদের যতই আসামি ভেবে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে থাকুক, ডিভি-লটারি দেওয়া দেশের মানুষ যতই সাম্রাজ্যবাদী দাঁত কেলিয়ে বসুক আমাদের মাথার উপর, বিশ্বায়ন যতই আমাদের বেশ্যায়নে নিয়ে যাক, কিংবা যতই ক্ষুধা নামক এক মারাত্মক প্রাকৃতিক-অস্ত্র কোনো তরুণকে বিমানের চাকায় পিঠে করুক- এসবের মধ্যেও কোনো এক সময় নাম বেঁধে দেয়া বসন্তঋতু আসছে। প্রতিবছরই আসে। কবিরাও স্ট্যান্ডবাই। লেখা হয় বসন্তের কবিতা।

তার ওপরে কোকিল একটা পুরোমাত্রায় বেয়াদপ পাখি। কু-উ-উ বলে এমন একটি টান মারে যে, যার ফুঁসফুসে ঠিকঠাক বাতাস ঢোকে না, তারও বুকের মধ্যে একটা খর্খরে ঘূর্ণি শাই শাই করে ওঠে। এই সময়, ফুলটুলও যথেষ্ট ফটোজেনিক হয়।

সাহিত্য সম্পাদক বসন্তের কবিতা ছাপান। আমরাও বসি, অঁলিয়স ফ্রাঁসেজে, বসন্তসন্ধ্যার ক্যাফেতে।

কিন্তু দিন দিন, আমার চিন্তারেখারা যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে এসব লেখাকে আর কবিতা বলা যাবে কিনা- প্রথম প্রশ্নটা আমিই করছি। কাজেই, আমি কবি হতে যাব কোন দুঃখে? আমি যা করি, আমরা চিন্তার ফলন ঘটাই। এ ব্যাপারে শব্দ-বাক্য-ভাষা হেল্প করে। ‘কবিতা’ শব্দটিই হয়তো আমার লেকার বিষয় হয়ে উঠছে। অন্য বিষয় যদি মাথায় না আসে তো কি করব?

এবারে সান্ধ্যভাষা- সমস্ত আহত মনের জন্য বিরল শুশ্রূষা, একামনের জন্য চড়ুইপন্থী দাম্পত্য এবং আমার মতো যারা পুরুষ বাবুই- আমা করি বসন্ত যার যা পাওনা মিটিয়ে দেবে। ফলে এই সন্ধ্যায়, বসন্তকে আলটিমেটাম দিচ্ছি, খর্খরে বাতাস বেশিদিন সহ্য করা হবে না- এভাবে মনোজাগতিক সন্ত্রাস ঘটাতে থাকলে, দায়িত্বশীল র‌্যাবও শেষে খবর পেয়ে যাবে। বসন্ত ক্রসফায়ারের মারা পড়বে। ইতোমধ্যেই অনেক বসন্ত মারা গেছে। তাদের জন্যে শোক পালনের দরকার নেই।

No comments:

Post a Comment