Thursday, August 20, 2009

কুরঙ্গগঞ্জন : হরিণের লজ্জা দেখার লোভ

বাঙলা কবিতা লিখি। লিকতে গিয়ে, হঠাৎ একটা শব্দ নিয়ে খটকা লাগে। হয়তো শব্দটার অর্থ কিছুটা আছা মতোন, আর তখনই অভিধান খুলে বসি। অভিধানে সব শব্দের মানে লেখা আছে। যেমন, কুলঙ্গি মানে হচ্ছে- জিনিশপত্র রাখার জন্য দেয়ালের মধ্যস্থিত ছোট খোপ। দিগন্তমোহে আমি মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে দেখি: নিভে যাওয়া বাল্যকাল একটি মাটির কুপি হয়ে জ্বলে জ্বলে উঠছে খোপ-কুলঙ্গিত, মামাবাড়ির সেকালের দেয়ালে... একরাতে, মা তখনও অবিবাহিত, নিরক্ষর নানীর শোবার ঘরের কুলঙ্গিতে লুকিয়ে রাখা তার একগুচ্ছ ভুল বানানে সমৃদ্ধ প্রেমপত্র ধরা পড়ে যাওয়ায়, হন্তদন্ত মামাদের সুপাত্র সন্ধান জরুরি হয়ে পড়ে। হবু বরগুলো হবু অবস্থায়-ই মরে যায়। থাক সেসব কথা, এখন কুলঙ্গি শব্দটার পরিষ্কার মানে কি- সেটা দেখবার জন্য যখন সংক্ষিপ্ত বাঙলা অভিধান খুললাম, খুঁজছি ক... কা... কু... কুলঙ্গি খুঁজে পাওয়ার অন্তত তেইশটি শব্দ আগে চোখে পড়ল অদ্ভুত এক শব্দ, শব্দটা কুরঙ্গগঞ্জন? কুরঙ্গগঞ্জন মানে- হরিণকে লজ্জা দেয় এমন; হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট। যারা কবিতা পড়েন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি- কুরঙ্গগঞ্জন শব্দের মানে বুঝেছেন? না, আমি ঠিক বুঝিনি। কারণ হরিণকে লজ্জা দেয় এমন কোনো প্রাণী আছে- উদাহরণ হিসেবে সেটা অভিধানে নেই। কোথায় এমন এক আছে যে, তাকে দেখে হরিণ লজ্জা পেয়ে যাবে? তাছাড়া হরিণের কী নেই যা তার মধ্যে আছে? এদিকে, হরিণ থাকে সুন্দরবনে, হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট সে থাকে কোথায়? সমুদ্রে, পাহাড়ে নাকি সে থাকে মেট্রো-চাঁদের শহর শেষের দ্বীপান্তরের বাড়ি?

কুরঙ্গগঞ্জন-এর আভিধানিক অর্থ জানার পরও মাথায় নানা প্রশ্ন আসে। প্রশ্নে প্রশ্নে প্রেম ঘন হয়। ভাবি, যদি কোনো ভেরিগুড ম্যুড ছুটে আসে একদিন লেখার সময়, সে লেখায় হঠাৎ করেই বসিয়ে দেব কুরঙ্গগঞ্জন শব্দটি, হয়তো হরিণের লজ্জা দেখার লোভে, নয়তো হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট কাউকে দেখার আকাঙ্ক্ষায়

আকাশ যেমন নীল, প্রত্যেকদিন সেরকমই কবির অভিপ্রায়...

No comments:

Post a Comment