আজ যে ভাষায় আমি কথা বলি, এই ভাষায় কবিতা লেখা সম্ভব... একথা তো জানতাম না। সত্যি, আমি বুঝতে পারিনি- কবিতায় ভাষা এত সহজ, আটপৌরে, নিরলঙ্কার হতে পারে। ধারে-কাছের শব্দগুলোও আজ অবলীলায় কবিতায় ঢুকে যাচ্ছে। কবিতা হয়ে উঠছে মুখোমুখি। যেন আজ আর কোনো আড়াল নেই, উড়াল নেই, উপমা-চিত্রকল্প নেই। বরং আজ গল্প আছে। গল্পের মুখোমুখি চোখ নাক-ঠোঁট-মুখ আজ মুখোমুখি। আজ গল্প হবে; চোখের সঙ্গে চোখের, নাকের সঙ্গে নাকের, ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁটের... যার যার যা ভাষা: কোনো বাধা নেই, দাদা কোনো ব্যাকরণ নেই
কথা বলার ভাষায় কবিতা লিখতে লিখতেও হঠাৎ মনে হয়, আর কথা নেই। তক্ষুণি, স্তব্ধতার ভাষায় কবিতা লিখি। কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করি, স্তব্ধতাও আমার ভাষা, যথার্থ অনুবাদ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। বাংলা একাডেমি থেকে কত ভাষা-শব্দ গবেষণা হচ্ছে, তারাও আমার স্তব্ধতা নিয়ে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ভাষা নিয়ে, দীর্ঘশ্বাসগুচ্ছের উৎপত্তি-বুৎপত্তি নিয়ে কিছু করছে না।
অথচ একদিন! কবিতার ভাষার জন্য আমিস কত শাস্ত্রগ্রন্থ, অভিধান-কবিধান-ছবিদান তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি; পাখির নীড়ের মতো বলতে না পারলেও বলার চেষ্টা করেছি- নীড়ের পাখির মতো... একদিন কবিতার ভাষার জন্য সারামাঠে ছড়ানো রোদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, পতেঙ্গার সড়কের ঝাউবনের ছায়াসব কুড়োতে কুড়োতে, মনে যত পুঞ্জিত ভাব, সম্প্রসারণ করতে করতে, মহাকাশব্যাপী শূন্যতা পূরণপূর্বক এক একটা শব্দ ধরে বাক্য গঠনের চেষ্টা করেছি। নদীঘাটে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখেছি স্নান... দেখেছি, নদীর জল কারো নাম রাখে না মনে
কত আঁকাবাঁকা পথ, পথের পাশের ঝোপজঙ্গল আমি মাত্রায় ফেলে লিখে গেছি বাংলা ভাষায়, শব্দে-কবিতায়; আততায়ী জোসনায় আমি নারীদিগন্তের দিকে হাঁটতে হাঁটতে শুনে ফেলি- মোরগের গলায় ভোর... সেই শব্দ, সেই ভাষা-সিম্বল ছেড়ে-ছুঁড়ে, আজ মুখের ভাষায় কবিতা লিখব বলে, এই বসলাম, মুখোমুখি, তোর
গল্প হবে, চোখের সঙ্গে চোখের, ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁটের, জিহ্বার সঙ্গে...?