Friday, August 21, 2009

নার্স, আমি ঘুমোইনি

টোকন ঠাকুর

প্রকাশক: আরিফুর রহমান নাইম
ঐতিহ্য
রুমি মার্কেট, ৬৮-৬৯ প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।

প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৪১৪, ফেব্রুয়ারি ২০০৮
গ্রন্থস্বত্ব: বর্ষা বিভাবরী
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রচ্ছদের আলোকচিত্র: রিচার্ড রোজারিও
মূল্য: একশত টাকা।



Nurse, Ami Ghumoini By Tokon Thaakoor. Published By Arifur Rahman Nayeem, Oitijjhya, Feburary-2008.
Price: Taka 1000.00 USS 4.00
ISBN 984-70193-0015-5

উৎসর্গ
আমার কোলবালিশক

মেইনস্ট্রিম বাঙলা কবিতা

সব যা তা! তা তা! থৈ থৈ!
হাতে তেমন কাজ নেই, ভাঁজ খৈ।

এর মধ্যেই কেউ লাভবান, কেউ লাভবতী
কেউ হারানো সুর, কেউ মধুমিতা
সেটাই এদেশের মেইনস্ট্রিম বাঙলা কবিতা

এরকমই

যাব না, যাব না!
যাব না বলেও কতবার গেলাম!
যতবার গ্রিন রোড
তিনগুণ-ততবার ড্রিম রোড গেলাম!

দেখব না, দেখব না!
বললাম, দেখতে চাই না!
কিন্তু চোখ আজন্ম-ধার্মিক, সে তার ধর্মে বিচ্যুত হয় না!
ভাবলাম, রাখব না! কিছুই রাখব না!
কোনও লিপি রাখব না, কারো মুখাকৃতি রাখব না!
এক একাসভামুহূর্তে, ছিঁড়েছুঁড়ে সব ফেলেও দিলাম জানলা দিয়ে
            যারা যোগ দিল বসন্তদিনের পাতাদের দলে
যদিও পড়ার ক্ষমতায় দেখার ক্ষমতায় আমার দুচোখ সাক্ষীই রয়ে গেছে

পাব না পাব না বলেও আমি
কত কী পেলাম!
পৈত্রিক পরিতাপ, বাল্যকাল জুড়ে ব্ল্যাকবোর্ড-চক-ডাস্টার-শিক্ষক...
বয়েসি-জোয়ার কিংবা প্রত্যাখ্যান করে চলে যাওয়া পথের কৌলিন্য

পেলাম
প্রচণ্ড ঝড়ের মুখে কী রোমাঞ্চকর, সিম্বলিক এক
            খড়পন্থী জীবন
মৌমাছিদের উৎপাদন-ব্যবস্থায় নিহিত মুগ্ধতাও পেলাম

লিখব না, লিখব না!
লিখব না বলেও শেষরাতে শুয়েশুয়ে কতবার লিখলাম
            নার্স, আমি ঘুমোইনি...

পাখি সম্পর্কিত শেষ কবিতা

প্রেম হলে সেই পাখি, যার সোনালি ডানা ছুঁয়ে দেখবার সৌভাগ্য পাওয়া চাই। যার একটি মায়াবী পালক খসিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। প্রেম সেই পাখি, যার চোখের মণিতে সামুদ্রিক নৌকার মাস্তুল দেখা যায়। যার মসৃণ গ্রীবায় নিঃসন্দেহে রোমিও-জুলিয়েট মঞ্চস্থ হতে পারে। প্রেম সেই পাখি, যার ঠোঁট দেখলেই প্রতীয়মাণ হয়- একজন একা মানুষের আত্মজীবনী কী ভয়ঙ্কর পিপাসার্ত! বীভৎস!

যখনই কেউ প্রেমে পড়ে মানে সেই পাখিতে পড়ে। তখন সে প্রেমরূপ পাখির ডানা ছুঁতে চায়। কারণ, তার অবচেতন মন প্রার্থনা করে ডানার নিচে আত্মগোপন। একুশ শতকের জ্বালায় জ্বলেও প্রেমে এরকম আত্মগোপন এখনো উঠে যায়নি। কিন্তু হঠাৎ কোনো পাখি যখন উড়ে যায়, ডানার নিচের ওমে যে আত্মগোপনকারী সে ধপ করে পড়ে যায়। নিঃশব্দে শব্দ হয়, ধপাস!

অর্থাৎ পাখি উড়ে গেলেই প্রেম উড়ে যায়। সেই প্রেম সেই পাখি আর সন্ধান করেও পাওয়া যায় না। এরপর যত পাখি চোখে পড়ে, সব অন্য পাখি। কোনোভাবেই আমি ভুলতে পারি না, সেই পাখি কোথায় গেল- যার অপরিসীম ডানার নিচে একদিন আত্মগোপনে ছিলাম, ওম সম্মেলন করেছিলাম...

আজ যেসব পাখি ওড়াউড়ি করছে, ডালে বসে আলস্য ভাঙছে- এরা তো জানেই না যে, প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করলেও আমি আত্মগোপনে থাকতে ভালোবাসি। ফলে, এখন আমি বুঝতেই পারছি না, কোন পাখিটার ডানার নিচে ওম্ সম্মেলন সফল হবে, সার্থক হবে?

কোন পাখিটা উড়বে না আর, স্বভাব ভেঙে?

নিঃশ্বাসে রচিত কবিতা

শুধু বসন্তেই কোনও কোনও নিঃশ্বাস কবিতা হয়ে যায়।

সেই কবিতা মেঘাচ্ছন্ন লিটল ম্যাগাজিন থেকে বেরিয়ে আসমানী গ্রন্থ হবার পথে, কিছুকাল শাহবাগের আকাশ থেকে অন্যান্য আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়। এই মিলিয়ে যাওয়া কবিতাগুলোই নিঃশ্বাসে রচিত কবিতা।

কোনও কোনও কবিতা কখনো ছাপা হয় না। সেগুলোও নিঃশ্বাসের সন্তান। হয়তো নিঃশ্বাসগুলো নিভৃতচারী, প্রেমে একপাক্ষিক, মিহিপন্থী... মুখোমুখি তাকে ধরা যায় না। আবিষ্কার করতে হয়। ছাপা না হওয়া এমন কিছু নিঃশ্বাস, এমন কিছু কবিতা আমারও আছে। কল্যাণী-কেই কান পাতলে, শোনাতে পারি। সেটা অঁলিয়স ফ্রাঁসেজে বসে শোনানো যাবে না, মুগ্ধতা ছড়ানো ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেই মিহিনিঃশ্বাসের কবিতাগুলো শোনাতে পারব। শোনাতেও চাই।

আমি জানি, আমার নাক-মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া কবিতাগুলো আলটিমেটলি কী চায়? চায় কি কেবল কি তরুণী কারও কানের কাছে নির্বাক, গ্রীষ্মপ্রধান আত্মপ্রকাশ? নাকি যন্ত্রস্থ না হওয়ার যন্ত্রণায়, এসব কবিতা প্রেমিকাকে মনে করে লিটল ম্যাগাজিন, বইকেই ভাবে বউ। যেন, যে-কেউ একজন সাড়া দিলেই সে শাদাপৃষ্টায় ঢুকে পড়তে পারবে। সঙ্গমতৃপ্ত সফল ঘুম দিতে পারবে।

এরকম মিহিনিঃশ্বাসের কবিতাকে মুখোমুখি বসে ধরা যায় না। আবিষ্কার করতে হয়। আবিষ্কার করতে কান লাগে, নির্ভুল জোছনাপীড়িত চরাচরে উৎকর্ণ কান। তাতে, মিহিনিঃশ্বাসের জন্মান্তর হয়। মুদ্রণের আকাঙ্ক্ষা জাগে। কারণ, গরম নিঃশ্বাসই কামশিল্পের বিজ্ঞাপন, লিপডিশ, যৌনবর্ধক।

এখন, এই মুহূর্তেও আমার নাক-মুখ দিয়ে মিহিনিঃশ্বাস বেরিয়ে যাচ্ছে। না-ছাপা কবিতা বেরিয়ে যাচ্ছে। এই কবিতা শুনতে চাইলে অঁলিয়াস ফ্রাসেজে বসে না, ঘরে গিয়ে তোমাকে আবহাওয়া তৈরি করতে হবে।

তাছাড়া বসন্ত-নিঃশ্বাসে রচিত কবিতা চৈত্রসংক্রান্তির পর তো আর শোনাতে পারব না। ততদিনে কবিতা আত্মগোপনে চলে যাবে, বাতাসে মিলিয়ে যাবে। জানি তো ঝড়ের সম্ভাবনা বাড়লে, বাতাস নিজেও পালিয়ে যাবে। এবং আমার হারানো কবিতার সংখ্যা বাড়বে।

তাহলে, এই বসন্তে আমার নিঃশ্বাসে কয়টা কবিতা ছাপা হল? আর কতগুলো ছাপা হলো না, মিহিপন্থী বলে? ছাপা না-হওয়া কবিতাগুলো কিভাবে শোনাব, ঘরে না-গেলে, কান না-পাতলে? বাঙলা কবিতার জন্যে আপুমণিদের কি বিন্দুমাত্র দয়ামায়া নেই?

ভৈরবি

একটু আগেও কাক ছিল ডাহা রাজনীতিবিদ;
এখন, এই ভোরবেলা গলি ফেরিঅলাদের, যেন আমাদের
-কী চাই কী চাই?
কোথাকার কোন জীবনপোড়ানা সুরে, মহিলা বিকোচ্ছে-
ছাই নিবেননি ছাই... ই...

ইহাকে কি ভৈরবি বলা যায়? ভোরবেলা...

বসন্তে রচিত ভাব-ভালোবাসা

হাওয়া ধার্মিক, তার কর্তব্য ধাওয়া।
লক্ষণীয়, সম্পর্ক এসে সম্পর্কের চলে যাওয়া
পথের শেষে সূর্যাস্ত একটি ছবি, একটা ফ্রেম
একটু একটু করে জড়িয়ে যাওয়া, লোভনীয় প্রবলেম
আমাদের অভিনিবেশ দাবি করে, দেখি খা খা
একটা মাঠের মধ্যে রোদমাখা ঢিলিমিলি আঁকা
এক জ্যান্ত দুপুর, জ্যান্ত ঘূর্ণি, এক জ্যান্ত স্বপ্ন, তখন
টবেই ফুলের বাগান, ছাদে, শ্রী শ্রী ছাদই শ্রী বৃন্দাবন

ধেনু বিনে নদীহীনে, বসন্তের এ দিনে রাধারানীরা
কোথায় গো সব, দ্যাখো আমি কবিতা লিখছি, কবিতাগুলো
রাত্রিবেলার বুকের নিচে বালিশ চাপা তুলো মানে শিমুল ফুলও
তার জীবনের গল্প নিয়ে গল্প হয়ে ওঠার আশায়
আমার কাছে আসে কিন্তু প্রকাশিত হয় কবির ভাষায়

এটাই ব্যর্থতা। আর ব্যর্থকে ভালোবাসারা ভালোবাসা দিতে
পারে না বলেই ছেলেটি থাকে উত্তরায়, মেয়েটি শ্যামলীতে।

Thursday, August 20, 2009

সব কবিতার শিরোনাম লাগে না

রোদ তুই ছন্দ জানিস? মাত্রা মানিস?
সামান্য ফাঁক-ফুটো পেলেই ঢুকে পড়িস?

রোদ তোর আসার পথে দেখা হয়েছে কার কার সঙ্গে, বল?
মেঘরা ছিল কোন বৃত্তে, কথা হয়নি আমাকে নিয়ে?

পরিপার্শ্বের হাওয়া, কার কাছে তুই অক্ষরবৃত্ত শিখে হয়েছিস হিম?
কোন ছন্দে পাতা ঝরে? বলদ এবং বাঙলা বিভাগের
বিরাট অধ্যাপকের মধ্যে যবে এত অনুপ্রাস তবে এত মিল?

গান তুই হাওড়ের মাঠে শুয়েছিলি শীতকালে
তোর উস্তাদ কোন কুলাঙ্গার খাঁ?
ধান তুই আমার শব্দে বোনা ফসল
মহাজন সাহিত্য সম্পাদক?

রোদ আজ সব খুলে বল, আমি তো তোকে জানি-
ড ফুলস্টপ না করেও তুই কেমনে কবিতা লিখিস
অচেনা ম্লান-মুখে?

জোশ জোশ! চটি পড়েনি, কী নিরক্ষর! থ্রি এক্স দ্যাখেনি
কী গ্রাম্য!
চড়ুই সেক্স করছে মহাসুখে...

হাউ আর ইউ, মৃগয়া?

আমাদের স্বপ্ন ঘুম-
তার কোনো ঘর নেই
নেই কোনো দেশ;

আমাদের কবিতা-
তার তো মোটেই নেই
সংসারী অভ্যেস;

আমাদের উপন্যাস-
প্রধান চরিত্রের গন্তব্য
গাঢ় নিরুদ্দেশ;

আমাদের ছোটগল্প-
সম্পর্ক, শেষ হইয়াও
হইল না শেষ...

০২.
আমাদের শব্দ, বাক্য, ভাবে
এত যদি দূরত্বশিল্প
মন কি করে মনের কাছে যাবে?
না-গেলে
কিভাবে
ঘামে
সমুদ্রের স্বাদ পাবে?

০৩.
ধরো এই হাত,
আমার হাতও আর তোমার হাতকে ধরে বলবে না-
‘হাত তুমি ভালো আছো?’

অথচ আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে চাইনি কখনো, তবু
বহুদিন তুমিও জানো না- কেমন আছি
আমিও জানি না- কেমন আছো?

বাঁচি? কিভাবে বাঁচো!

পোকা, প্রজাপতির গল্প

এখনো কবিতা পড়ো মানে তুমি মনে মনে ভাবো-
আচমকা এক ফুরফুরে বিকেলে প্রজাপতি-সম্মেলন হবে।
সেই সম্মেলনে তুমি স্বাগতিক, তোমার ব্যস্ততা থাকবে।
তুমি ফুলদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে
ঘাসের বক্তব্য শুনতে শুনতে, হয়তোবা ভুলে যাবে-
একজন কবি এসে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে দেখছে
পোকা থেকে তুমি প্রজাপতি হয়ে কতটা বদলে গেলে?

এখনো কেউ কবিতা লেখে মানে সেই লোকটাই কবি-
যে কি না পোকা হতে পারেনি বলেই প্রজাপতি হতে পারছে না

নয়া ফিল্ম ডিরেক্টর

ফিল্ম ডিরেক্টর মানতে নারাজ, রোদ পড়ে যাচ্ছে। সূর্যাস্ত ধরা দেবে না। ডে সিকোয়েন্স বাদ থেকে যাবে! বিকেলের ছাদের রেলিং ধরা ফ্রেমে মনমরা মেঘ আর মেঘের অ্যাসথেটিকস চিত্রিত হবে না! চল্লিশ জনের ইউনিটে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়ানো নিঃসঙ্গ উন্মাদের ডাকনাম ফিল্ম ডিরেক্টর। মাস্টার শটে যিশুকে রেখে পরে কেটে কেটে ক্লোজআপে পেইনফুল টেক: ফলে ফিল্ম ডিরেক্টর হচ্ছে মা, বেথেলহেমের শিশুর মা। জ্বর, ভয়াবহ জ্বর; কিন্তু কেউ তার কপালে হাত রেখে পুড়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের লাল গাড়ি মাটির রাস্তার গ্রাম পোড়াদহে পৌঁছতে পারে না। যিশুর মাকেই শনাক্ত করতে হয় সন্তানের ক্ষত-রক্তাক্ত, ক্রুশবিদ্ধ লাশ। যিশুর মায়ের যন্ত্রণা তো কেউই মাপে না!

নায়িকার মুড অফ! লাল বাউলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? তাহলে গোষ্ঠের গান কে গাবে? মেকআপম্যান মুড-অফ নায়িকার মুড অন করে দিল; কিন্তু শটে দাঁড়িয়ে সে সংলাপ ভুলে যাচ্ছে। অনেক অনেক বিচ্ছিন্নতার পরেও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক প্রেমিকের মৃত্যু সে আশা করেনি। এদিকে, নিরক্ষর নায়কের হাতে আদর্শলিপি। নায়ক মাত্রই ভাঁড়। আর যারা অন্যান্য... তারা ধুলোয় মিশে যাচ্ছে, দিগন্তে পালিয়ে যাচ্ছে, তারা হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাচ্ছে নিজের ছায়ার মধ্যে।

একদল ফড়িঙ কিংবা হরিণীর বদলে একটি প্রজাপতির পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ক্যামেরার পেছনে বসে বা দাঁড়িয়ে নয়া ফিল্ম ডিরেক্টর এন্ড লোনলি অ্যাক্টর সিনেমা বানাচ্ছে, এই বসন্তে...

কুরঙ্গগঞ্জন : হরিণের লজ্জা দেখার লোভ

বাঙলা কবিতা লিখি। লিকতে গিয়ে, হঠাৎ একটা শব্দ নিয়ে খটকা লাগে। হয়তো শব্দটার অর্থ কিছুটা আছা মতোন, আর তখনই অভিধান খুলে বসি। অভিধানে সব শব্দের মানে লেখা আছে। যেমন, কুলঙ্গি মানে হচ্ছে- জিনিশপত্র রাখার জন্য দেয়ালের মধ্যস্থিত ছোট খোপ। দিগন্তমোহে আমি মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে দেখি: নিভে যাওয়া বাল্যকাল একটি মাটির কুপি হয়ে জ্বলে জ্বলে উঠছে খোপ-কুলঙ্গিত, মামাবাড়ির সেকালের দেয়ালে... একরাতে, মা তখনও অবিবাহিত, নিরক্ষর নানীর শোবার ঘরের কুলঙ্গিতে লুকিয়ে রাখা তার একগুচ্ছ ভুল বানানে সমৃদ্ধ প্রেমপত্র ধরা পড়ে যাওয়ায়, হন্তদন্ত মামাদের সুপাত্র সন্ধান জরুরি হয়ে পড়ে। হবু বরগুলো হবু অবস্থায়-ই মরে যায়। থাক সেসব কথা, এখন কুলঙ্গি শব্দটার পরিষ্কার মানে কি- সেটা দেখবার জন্য যখন সংক্ষিপ্ত বাঙলা অভিধান খুললাম, খুঁজছি ক... কা... কু... কুলঙ্গি খুঁজে পাওয়ার অন্তত তেইশটি শব্দ আগে চোখে পড়ল অদ্ভুত এক শব্দ, শব্দটা কুরঙ্গগঞ্জন? কুরঙ্গগঞ্জন মানে- হরিণকে লজ্জা দেয় এমন; হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট। যারা কবিতা পড়েন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি- কুরঙ্গগঞ্জন শব্দের মানে বুঝেছেন? না, আমি ঠিক বুঝিনি। কারণ হরিণকে লজ্জা দেয় এমন কোনো প্রাণী আছে- উদাহরণ হিসেবে সেটা অভিধানে নেই। কোথায় এমন এক আছে যে, তাকে দেখে হরিণ লজ্জা পেয়ে যাবে? তাছাড়া হরিণের কী নেই যা তার মধ্যে আছে? এদিকে, হরিণ থাকে সুন্দরবনে, হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট সে থাকে কোথায়? সমুদ্রে, পাহাড়ে নাকি সে থাকে মেট্রো-চাঁদের শহর শেষের দ্বীপান্তরের বাড়ি?

কুরঙ্গগঞ্জন-এর আভিধানিক অর্থ জানার পরও মাথায় নানা প্রশ্ন আসে। প্রশ্নে প্রশ্নে প্রেম ঘন হয়। ভাবি, যদি কোনো ভেরিগুড ম্যুড ছুটে আসে একদিন লেখার সময়, সে লেখায় হঠাৎ করেই বসিয়ে দেব কুরঙ্গগঞ্জন শব্দটি, হয়তো হরিণের লজ্জা দেখার লোভে, নয়তো হরিণ থেকে উৎকৃষ্ট কাউকে দেখার আকাঙ্ক্ষায়

আকাশ যেমন নীল, প্রত্যেকদিন সেরকমই কবির অভিপ্রায়...

Wednesday, August 19, 2009

বুয়াকে নিয়ে প্রেমের কবিতা-২

আকাশে, জোবেদা খালার সঙ্গে তুলনাযোগ্য চাঁদ
বিধবা কিন্তু আভা ছড়ায়

আভা ছোঁয়া মুশকিল, তবু ইনিয়ে বিনিয়ে
নৈকট্যের ছুঁতো
জোবেদা খালা ছুটা বুয়া, উদ্ভুত
এই পরিস্থিতিতে, মিডল ক্লাসের
সতীচ্ছেদ হবার ভয়;

এমনকি এরপর তারা আমার কবিতাও
আর পড়বে কিনা, আমাকেও স্পর্শ করবে কিনা
মনে প্রশ্ন, চাপা ভয়, গগুড়িগুঁড়ি ভ্যাবাচ্যাকা সংশয়

শব্দের সঙ্গে সম্পর্কের পরও...

শব্দের সঙ্গে থাকি!
কত শব্দকে কতবার, কতভাবে গ্রহণ / বর্জন করেছি
বলতে পারব না
কতবার মাস্টারবেশন?
কতেক শব্দ প্রিয় হয়ে যায়, তারা কি বন্ধুশব্দ
না নিছক আমার অনুসারি?
কতেক শব্দ পালায়, হারায়... গেরিলা হতে চায়
তাদের উদ্দেশ্যে কি সাময়িক না সুদূরপ্রসারী?
চমক আছে, বাগে আসে না এমন অনেক শব্দ চিনি, আমি শব্দচারী
কোনো কোনো শব্দ অতি খোলামেলা... উঠতি নায়িকা
কোনো কোনো শব্দ ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে গম্ভীল... মেজমামা
কোনো কোনো শব্দ উঠে আসে গ্রামগঞ্জ থেকে... ঢেঁকি বা ধানক্ষেত, নৌকাঘাট
কোনো কোনো শব্দ ‘আসব’ ‘আসব’ বলে কথা দিয়েও কিন্তু আসে না
নাকি আসতে পারে না, ভয় পায়, অথবা আমাকে পছন্দ করে না
সেই শব্দের একটি শব্দ প্রেম, একটি বুদবুদ

আবার কিছু শব্দ শেষপর্যন্ত অভিধানে থাকে না, তারা চিরকাল শরণার্থী
গ্রন্থহীন তারা গৃহহীন
সেইসব শব্দই কি আমার গরিব আত্মীয়, যাদের নিজের যাবার জায়গা নেই?
আমাকে কি তারা ভাবছে বিশাল শব্দপ্রেমিক কিংবা শব্দসওদাগর?
দ্যাখো! কীভাবে তাকিয়ে আছে নির্ঘুম, নির্বাসন, নো ম্যানস ল্যান্ড, ভাঙা বেহালা
আত্মহত্যাপূর্বক মদ, মরুজোছনা, শূন্যতায় চুম্বন ইত্যাদি শব... দো
শব্দ আসে শব্দ যায় শব্দ ফেরি করি আমি শব্দসঙ্গে আছি
কিন্তু একটি শব্দের উপস্থিতি আমি এক ইঞ্চিও মানতে পারছিনে
যথাশব্দ দূরত্ব
এই আপাতকালে নিঃশব্দসূচক সন্ত্রাসী শব্দ তুমি পাঠিয়েছ
মনোজাগতিক মহাকাশ থেকে
জানি, তোমার পাঠানো শব্দকে তুমি ছাড়া কেউ আর নড়াতে পারবে না
সরাতে পারবে না... তুমি রাণী ভবানী
তাই যতই আমি শব্দের সঙ্গে থাকি
যতই আমি হই না কেন শব্দচারী পাখি
যতই বলি, পুলিশ ডাকব, র‌্যাব ডাকব
প্রেরিত তোমার শব্দ দূরত্ব যায় না
দূরত্ব আরো বাড়ে, বাড়ে নিঃশব্দসূচক সন্ত্রাস!
অথচ আমি মুখর-মুখর শব্দফেরিঅলা- সৃজনশীল এই সাড়ে পাঁচফুট জীবনে
এগারো ফুট পরিহাস...

ভাষা-শব্দ-কবিতা-গল্প

আজ যে ভাষায় আমি কথা বলি, এই ভাষায় কবিতা লেখা সম্ভব... একথা তো জানতাম না। সত্যি, আমি বুঝতে পারিনি- কবিতায় ভাষা এত সহজ, আটপৌরে, নিরলঙ্কার হতে পারে। ধারে-কাছের শব্দগুলোও আজ অবলীলায় কবিতায় ঢুকে যাচ্ছে। কবিতা হয়ে উঠছে মুখোমুখি। যেন আজ আর কোনো আড়াল নেই, উড়াল নেই, উপমা-চিত্রকল্প নেই। বরং আজ গল্প আছে। গল্পের মুখোমুখি চোখ নাক-ঠোঁট-মুখ আজ মুখোমুখি। আজ গল্প হবে; চোখের সঙ্গে চোখের, নাকের সঙ্গে নাকের, ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁটের... যার যার যা ভাষা: কোনো বাধা নেই, দাদা কোনো ব্যাকরণ নেই

কথা বলার ভাষায় কবিতা লিখতে লিখতেও হঠাৎ মনে হয়, আর কথা নেই। তক্ষুণি, স্তব্ধতার ভাষায় কবিতা লিখি। কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করি, স্তব্ধতাও আমার ভাষা, যথার্থ অনুবাদ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। বাংলা একাডেমি থেকে কত ভাষা-শব্দ গবেষণা হচ্ছে, তারাও আমার স্তব্ধতা নিয়ে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ভাষা নিয়ে, দীর্ঘশ্বাসগুচ্ছের উৎপত্তি-বুৎপত্তি নিয়ে কিছু করছে না।

অথচ একদিন! কবিতার ভাষার জন্য আমিস কত শাস্ত্রগ্রন্থ, অভিধান-কবিধান-ছবিদান তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি; পাখির নীড়ের মতো বলতে না পারলেও বলার চেষ্টা করেছি- নীড়ের পাখির মতো... একদিন কবিতার ভাষার জন্য সারামাঠে ছড়ানো রোদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, পতেঙ্গার সড়কের ঝাউবনের ছায়াসব কুড়োতে কুড়োতে, মনে যত পুঞ্জিত ভাব, সম্প্রসারণ করতে করতে, মহাকাশব্যাপী শূন্যতা পূরণপূর্বক এক একটা শব্দ ধরে বাক্য গঠনের চেষ্টা করেছি। নদীঘাটে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখেছি স্নান... দেখেছি, নদীর জল কারো নাম রাখে না মনে

কত আঁকাবাঁকা পথ, পথের পাশের ঝোপজঙ্গল আমি মাত্রায় ফেলে লিখে গেছি বাংলা ভাষায়, শব্দে-কবিতায়; আততায়ী জোসনায় আমি নারীদিগন্তের দিকে হাঁটতে হাঁটতে শুনে ফেলি- মোরগের গলায় ভোর... সেই শব্দ, সেই ভাষা-সিম্বল ছেড়ে-ছুঁড়ে, আজ মুখের ভাষায় কবিতা লিখব বলে, এই বসলাম, মুখোমুখি, তোর

গল্প হবে, চোখের সঙ্গে চোখের, ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁটের, জিহ্বার সঙ্গে...?

ত্রিদিব দস্তিদার মারা যাবার পর

বেলাল চৌধুরীর ফোন, হ্যালো টোকন...

একটা শোক, একটা ইনফরমেশন! আমার বাসায় আমি আর কয়েকটা চড়ুই, রুম ভাগাভাগি করে শুই ভোরের চড়ুই আমাকে ডাকে কিন্তু আমি তো ঘুমাই, মনে একটা শালিক ছিল, তাও এখন নাই। তাই ঘুমোচ্ছিলাম, সকাল ছটায় বেলাল চৌধুরীর ফোন... অনেকদিন পর তখন, সেই মুহূর্তে ফিরে এল শালিকের মন!

বেলাল চৌধুরী বললেন, ‘গতরাতে ত্রিদিব এক্সপায়ার করেছে... ওর তো কেউ নেই, সৎকার করারও কেউ নেই, বন্ধুদের জানিয়ে দাও আর তুমি এক্ষুণি চলে আসো নয়াপল্টনে জোনাকির কাছে...’

প্রেসক্লাব যাই, গিয়ে দেখি ত্রিদিব দা নাই তবে বহুদিন আগে, পটিয়া থেকে এই শহরে ঢুকে-পড়া নিঃসঙ্গ এক জিপসি-কবির ডেডবডি পড়ে আছে, যদিও ‘ওর তো কেউ নেই, সৎকার করারও কেউ নেই’ এই মমতা সত্য নয়- কারণ, আরো পঞ্চাশজন আসঙ্গ নিঃসঙ্গতাপ্রার্থী তখন লাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা কারা? কেউ নয়?

শেষরাতে বৃষ্টির পর ভীষণ মেঘ হয়ে থমকে ছিল মৌরি। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল, সব্বাইকে বলি: দাহপূর্ব দেহ থেকে শাদাকাপড় সরাও, কেননা, ছাই হবার আগেই আমি দেখতে চাই- একদিন কবি যা জানিয়েছিলেন- অঙ্গে আমার বহুবর্ণের দাগ...

Sunday, August 16, 2009

ফুল-সম্ভবা কুঁড়ি ভেতর

খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাচ্ছি।
এই! গ্রামান্তের তালগাছ, শোনো-
একদিন, মাটি থেকে দাঁড়ানো মাথার উপরের
শূন্যতা ছুঁয়ে ফেলব-
এই ধরনের একটি ভাবনাই আমাকে অখণ্ড করে রেখেছিল
এই ধরনের একটা স্বপ্নই একদিন...

আজ ভাবনার সঙ্গে মিল না হবার দিন
শূন্যতা ঘুচে যাবার দিন
অনেক অনেক ছবি এঁকে শূন্যতা ভরে ফেলবার দিন
ছবির মধ্যে ইচ্ছেমতোন রং মাখবার দিন
আজ আর আমার অখণ্ডতা-অঙ্গিকার নেই।
তালগাছ তুমি কোথায়? ক্ষম: গো দিগন্তপ্রেতিনী
অনেকদিন হলো আকাশের নিচে দাঁড়ানো হয় না
টাইম নেই
বহুকাল পরে গতকাল মনে হলো, সন্ধ্যার বিয়ের পর
সেই রাতের আত্মরতিরই স্রেফ আত্মহত্যা থেকে
সেইফ করে দেয় আমাদের তিন বন্ধুকে- দুইজন পরে
রিহাবে গেছে

এরপর ভ্রমণকাহিনী- হারাগাছ থেকে হাভানা,
তামাক ভূমির আগুন
এরপর আমরা যে যার মতো... যে যার গুপ্ত-প্রকাশ্য অধিবাসে
ফলে, ছিন্নতার সূত্রেই ছিটকে পড়েছি মানচিত্র ছিঁড়ে
শূন্যতা বিভিন্ন রকম, মাথার উপরেও বিভিন্ন আকাশ...

যেটুকু অবশিষ্ট আমি, এখনো চোরাচোখে
মহিলা কলেজের দিকে, চলন্ত রিকশায়... এখানে ওখানে
কিংবা লিপিস্টিকের দোকানের সামনে দেখে যাচ্ছিলাম
মধুর উৎস! মধুবন্তী ছন্দে ফোট পুষ্প দি... ফুল আপুদের
মেঘ হলো, না বৃষ্টি হলো, হঠাৎ
এক কুঁড়ি, সতেরো পেরোইনি
সামান্য বাতাসেও সে এমন কম্পন তুলেছে ছবি এঁকে
শূন্যতা ঘোচানো শিল্পের শহরে
তাতে, ধাক্কা লাগছে দেহে;
দেহ তো একটা মনুমেন্ট, পরাক্রমী, মেঘ পর্যন্ত উঁচূ হতে গিয়ে
পাল্টা ধাক্কার চেতনায়, লোভে
ভেঙে-চুরে, খণ্ড-বিখণ্ড... দেহখানি
কত ছোট হয়ে ঢুকে যাচ্ছে, গলে পড়ছে আসন্ন ফুল-সম্ভবা
রেণু রেণু কুঁড়ির ভেতর...

আসিতেছে, চলিতেছে, পরবর্তী আকর্ষণ

আসিতেছে
দি নিউ কুয়াশা সার্কাস!
একটার পর একটা কেরা দেখতে হবে-
রোমান্টিক খেলা, হতবাক খেলা, ত্রিফলা, ত্রিফলা ছোরার নিচে শুয়ে-পড়া
মারাত্মক খেলা... হাই জোকার! হ্যালো রিংমাস্টার!!

বন্দি বাঘও খাঁচা থেকে বেরিয়ে ওস্তাদের চোখে চোখ রেখে খেলা দেখাবে
যদিও, সার্কাসে শিক্ষানবিশ বাঘের দুচোখে তখনও
ঘনজঙ্গলের স্মৃতি, বাঘিনীর জন্যে মায়া, প্রেম, পুনশ্চ শিকারের গুপ্ত সংকেত
খুব লক্ষ্য করে দেখলে, তোমার চোখেও ধরা পড়বে

চলিতেছে
আফটার দ্য রেইন!
কিন্তু সিনেমার শুরু থেকেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি... শুধু বৃষ্টি?
এরকম কারেক্টারলেস বৃষ্টি কখনো আগে দেখা যায়নি;
যেহেতু রিয়েল রেইন, শট টু শট থার্টি ফাইভ ফ্রেমের বাইরেও
না-জানি কত প্রকার বৃষ্টি কত ভাবে ঝরিতেছে?
আনন্দ বেদনার বৃষ্টি, অত্যন্ত আবেগের বৃষ্টি, শুধু শুধু বৃষ্টি!
যাই হোক, আফটার দ্য রেইন কিভাবে দ্য এন্ড হবে
অনুমানেও কিছু বুঝতে পারছি না, কারণ
এই বৃষ্টি ক্যারেক্টারলেস বৃষ্টি, মনে হচ্ছে
এই বৃষ্টি আজীবন, কোনো তরুণের পক্ষেই থামানো সম্ভব হবে না
এই বৃষ্টি বুকের মধ্যে

পরবর্তী আকর্ষণ
নাটক!
অবশ্যই মঞ্চ খুব ছোট, কিন্তু এই ছোট মঞ্চের ওপরে বিদ্যুৎ বাল্বের
নিচে দাঁড়িয়ে
আমাকে বলতে হবে দীর্ঘ সংলাপ;
‘ওহ! কী বিস্তীর্ণ এই প্রায় মরে যাওয়া নদীবক্ষে শুধু বালি আর বালি
মাথার ওপরে একাদশীর চাঁদ
আমি এই চরাচরে পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছি মিস দুষ্টু মেঘ উনিশের রজঃস্বলা মেঘ
একমাত্র তুমিই নষ্ট করতে পারো মিথ্যে মিথ্যে জোছনায়
জীবনব্যাপৃত এই বালিশিল্পকলা
কি, পারো না? বলো, বলো, বলো...

হাওয়া বিবিরা

হাওয়া, ভেন্টিলেটর হইতে...
ছাত্রী হলের বাথরুম
দূরে দাঁড়িয়ে
পাঁচিলের বাইরে থেকে ছুঁড়ে মারা ইটের টুকরো লেগে
ভেন্টির কাচ ভেঙে গেছে, ভেতরে বাল্ব জ্বলছে

ছাত্রী হলের বাথরুম থেকে ভেসে আসে স্নানরতা হাওয়া
আসে উস্কানিমূলক সুর
লিরিকটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত
এদিকে, অনিদ্রারোগীর দরজায় টোকা মারে
রবীন্দ্র-বিষণ্ন গীতিকা

হাওয়া, ঝিরিঝিরি... হঠাৎ মত পাল্টিয়ে
ঝড়ো হয়ে উঠলে
একবার দেখা গেল
জামার তিনটা বোতামই নেই!

তরুণ কবির পায়ের নিচে কেঁপে কেঁপে ওঠে মিডনাইট
অ্যাসথেটিকস আত্মরতি করতে করতে আর্ট হয়ে ওঠে
পাতা কুড়োনিরা পাতা না কুড়োলে তো রান্নাই হবে না
বনপথ হারিয়ে যাবে
গাছ কখনোই বলবে না-
লোকালয় কোনদিকে, কতদূর?

হাওয়া, বাণ মারা হাওয়া, যথেষ্ট দুষ্টুও
পোশাক-আশাকে সে ভ্রূক্ষেপহীন, ভীষণ হেঁয়ালি
কোনোদিনও কবিতা পড়ে না- এমন প্রাণেও
কবিতা লেখার ভাব জমিয়ে দিচ্ছে

আমারও শরীর ভরা মনে এখন ব্যাপক সন্দেহ
চোত মাসের এই শেষ কয়টা দিনের হাওয়াই আড়ালে
বা অ-আড়ালে সব সর্বনাশ করে দিচ্ছে

কিন্তু হাওয়ার বিরুদ্ধে কে, কী বলবে?

চতুর্দশপদী নিয়তি-২

কোনদিন কোনো এক ঝোপঝাড় কুঞ্জের আড়ালে
আমরা ফড়িঙ ছিলাম, ওড়াউড়ি করেছিলাম,
মানবচক্ষুর কাছে পতঙ্গ ছিলাম; চক্রবালে
রূপ-পরিগ্রহে আজ আমি চড়ুই, ধর্মের বিধি কাম
আর তুমি বিবাহিতা, সন্ধ্যার বান্ধবী, তুমি রাধা
তুমি দারুবন থেকে প্রলুব্ধকরণী দ্রাক্ষা, চোলাই
তুমি টলোমলো জল চৈত্রাদিঘিতে দুর্জ্ঞেয় ধাঁধা

আমি ধার্মিক, ঝিনুকের বক্ষ খুলে দেখতেই চাই
যদিও তুমি আমার দুরপনেয় ফড়িঙবান্ধবী
উড্ডয়নের অনেক আগুন তোমার ডানায়, বুকে
উড়তে উড়তে আপেলবনে ঢুকে পড়েছি আমি

যখন মাছি ছিলাম, যেন মাছিই আপেলের স্বামী
শ্রাবণদিনের লিরিক্যাল মেঘ খরার সম্মুখে

তুমি বালিমাধুর্যের কবিতা... আমি বৃষ্টিফোঁটা, কবি